তৌহিদ আক্তার পান্না,ঈশ্বরদী।। ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারীর আলোচিত ঋণখেলাপি ৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও জেল হাজতে প্রেরনের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। তদন্ত কমিটির আহবায়ক হয়েছেন সমবায় ও
ব্যাংকের ডিজিএম আহসানুল গনি। অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন উপ-ব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) আব্দুর রাজ্জাক ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকল্প ও ঋণ) আমিনুল
ইসলাম রাজিব। আজ সোমবার সকাল ১০টায় আহবায়ক আহসানুল গনির নেতৃত্বে ভাড়ইমারীতে সরেজমিনে তদন্ত
করছে তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তদন্তকারী কর্মকর্তারা তদন্তকালে ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বললেও
তদন্তকালে সেখানে উপস্থিত ছিলনা ভুক্তভোগী কৃষকদের অনেকেই। একারণে তদন্তকারী কর্মকর্তারা অনেকটাই
বিব্রতবোধ করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, আজ ৫
ডিসেম্বর সোমবার সরেজমিনে তদন্তে আসার বিষয়টি ভুক্তভোগী কৃষকদের আগেই জানানো হয়েছিল। তারপরও
বেশীরভাগ কৃষকই অনুপস্থিত রয়েছেন কাজের অজুহাত দেখিয়ে। তারা একই কারণ দেখিয়ে বাড়িতে থাকেননি এবং আমাদের সাথে কথাও বলেননি। ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ সালে ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারী এলাকার ৪০ জন কৃষককে দলগতভাবে এই ঋণ প্রদান করা হয়েছিল। যার মধ্যে তিনজন কৃষক সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি ৩৭ জন কৃষকের ঋণের টাকা ও এর মধ্যে অনেকেরই লভ্যাংশ পরিশোধ না করায় মামলা করতে বাধ্য হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কৃষক সমবায় সমিতির
সভাপতি বিলকিস নাহার জানান, গ্রেফতারকৃত ১২ কৃষকের মধ্যে অতিয়ার রহমান নামে এক কৃষক ২০১৬
সালে ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। তিনি সুদসহ ৪৯ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও ৪৩৩ টাকা বকেয়া থাকায় তার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার করে
জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। যা কৃষকের জন্য লজ্জাজনক বিষয়। তবে ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক আসল টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু তাদের সাত বছরের সুদ বকেয়া রয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক মূল টাকা ফেরত দেয়নি। ৩৭ জনের মধ্যে ১০ জন কৃষক মূল টাকা ফেরত দিলেও বিভিন্ন অংকের সুদ পরিশোধ করেননি। আর বাকি ২৭ জন
কৃষক মূল টাকা এবং সুদ কোনটাই সম্পূর্ণ পরিশোধ করেননি। তদন্ত দলের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় ফিরে
দ্রুততম সময়ের মধ্যে পল্লী প্রকল্প ঋণ গ্রহিতা সদস্যদের সাথে ঋণ প্রদান,আদায় ও পরিশোধ সংক্রান্ত প্রমাণ
পত্রের তথ্য পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তবে কৃষকদের অভিযোগ, গ্রেফতারের আগে মামলার বিষয়ে বাদী পক্ষের কোন নোটিশ তারা
পাননি। মামলার বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্পণের সুযোগ থাকা উচিত ছিল বলে মনে করেন ভূক্তভোগী কৃষকরা।
এদিকে কয়েক দফায় কৃষকরা ঋণের কিস্তির টাকা কৃষক সংগঠনের সভাপতি সম্পাদক ও ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে দিয়েছেন বলে একাধিক কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। কিস্তির জন্য জমা দেওয়া টাকা কেন জমা হয়নি তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার বলে ভুক্তভোগী
কৃষক পরিবারের সদস্যরা মনে করেন। উল্লেখ্য, ঋণখেলাপী মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ায় গত ২৪ নভেম্বর ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারী এলাকার ১২ জন কৃষককে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা
হয়েছিল।
Leave a Reply