স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী।। প্রায় চারশত কোটি টাকা দেনার অজুহাতে দেড় বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া পাবনা চিনি মিলের প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। মিলের যন্ত্রপাতি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা না গেলেও মাঝে মধ্যেই ছোটখাটো চুরির খবর ও অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে মূল্যবান
গাছ বিক্রির খবর লোক মুখে শোনা যায়। যদিও এসব চুরি ও অনিয়ম করে গাছ বিক্রির বিষয়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অস্বিকার করেন । ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশণ পাবনা চিনি মিল সহ ছয়টি মিলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষনা করে পত্র দেয়ার পর থেকেই মিলটি বন্ধ রয়েছে। আখ চাষী ও ঈশ্বরদী তথা পাবনা জেলাবাসী মিলটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে রক্ষনাবেক্ষণ এবং প্রায় এক হাজার ২’শ স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিকসহ প্রায় ১০ হাজার পরিবারের রুটিরুজি আয়ের স্থান ও জাতীয় সম্পদ হিসেবে মিলটিকে পূণরায় চালুর দাবি করেছে। জানাগেছে, ঈশ্বরদী দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়াতে ১৯৯২ সালের
২৭ ডিসেম্বর ৬০ একর জমির উপর পাবনা চিনি মিলটি স্থাপিত হয়। মিলটি চালু করতে ১’শ ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষা মূলকভাবে চালু করা হয়। পরের বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে মিলটি। এরপর থেকেই মিলটি চলতে থাকে। মিলকর্তৃপক্ষ দিনে দিনে আখ আবাদ বৃদ্ধি কল্পে নানা পরিকল্পনা নিয়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ চলমান রাখে । এ সুযোগে কতিপয় কর্মকর্তা, শ্রমিকনেতাসহ কিছু কর্মচারীরা মিলের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নীজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত হওয়ায় মিলজোন এলাকায় আখের বাম্পার ফলন হওয়া সত্বেও প্রতি
মৌসুমে লোকসান বাড়তে থাকে। একই সাথে লোনের সুদও বাড়তে থাকে। এক সময় লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে যখন প্রায় ৪’শ কোটি টাকায় এসে দাঁড়ায়। তখন পাবনা চিনিমিলটির আখ মাড়াই বন্ধের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করে। বিষয়টি টের পেয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা নানা মুখী আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায় এবং মিলটিতে
আখ মাড়াই চালু রাখার দাবি করেও ব্যার্থ হয়। অবশেষে গত ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশণ পাবনা চিনি মিলসহ ছয়টি মিলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষনা করে পত্র দেয়। এর পর থেকেই পাবনা চিনি মিলের প্রায় ৮০
কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার পথে। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, মিল গেটে গার্ড আর প্রশাসনিক কাজ চালু রাখতে এমডিসহ কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কেউ নেই। চিনিমিলের ভিতরে খোলা আকাশের নীচে পড়ে আছে আখ পরিবহণের
দু’শতাধিক ট্রলি। আখ মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলো রোদবৃষ্টিতে ভিজে মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে। চিনিমিল সূত্রে জানাযায়, আখ মাড়াই প্লান্টসহ চিনি মিলের
প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মাড়াই যন্ত্রের ডোজ্ঞা, নাইফ, ক্রাসার, বয়লার হাউজ, রুলার ডায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে।
পাবনা চিনিমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুদ্দিন জানান, চিনি মিলটি এখনও পুরাপুরি বন্ধ করা হয়নি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এটি চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তবে যতদিন পর্যন্ত মিলটি চালু না করা হচ্ছে, ততদিন পাবনা জেলার আখ চাষীদের নর্থবেঙ্গল চিনিমিলের সাথে সম্পৃক্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাবনা চিনিমিলে প্রায় ৪’শ কোটি টাকা দেনা হয়েছে। মিলটির কর্মকর্তা কর্মচাবীদের অন্য চিনি মিলে সংযুক্ত করা হচ্ছে এবং হয়েছে। চিনিমিল কর্তৃপক্ষ চুরির বিষয়টি এবং অনিয়ম করে গাছ বিক্রির বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, মিলে আপাতত: আখ মাড়াই বন্ধ রয়েছে। মিলটি আবার চালু হতে পারে। বাংলাদেশ চিনিমিল আখ চাষী ফেডারেশনের মহাসচীব এবং পাবনা জেলা আখ চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাজাহান আলী বাদশা বলেন, ঈশ্বরদী তথা পাবনা জেলাবাসীর স্বার্থে দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল আখের উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য মিলটি জরুরীভাবে চালু করা দরকার।
Leave a Reply