স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে এক ফোটাও বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে নানা দূর্নীত-অনিয়ম করেছে, আমরা ক্ষমতায় এসে ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি ।
২০১০ সালে আমরা আবার ক্ষমতায় এসে পাওয়ার উৎপাদন আইন প্রনয়ন করে বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে আলোচনা করে ঈশ্বরদীর রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু করি। প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় ঈশ্বরদীর রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট -১ এর চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধান মন্ত্রী রাশিয়ান সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। এই সুবর্ণজয়ন্তীতে পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে পারলাম বিশেষ করে এই প্রকল্পের ইউনিট-১এর রি-এ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করতে পেরেছি যা সত্যিই গর্ভের বিষয়।
রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস উসমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক এলেক্স লিখাচেভ বক্তব্য দেন। এসময় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এড.শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনা-৪ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস,পাবনা-৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, আহমেদ কবীর ফিরোজ এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান লাল,জিয়াউল হাসান, লে.জেনারেল আতাউল হাকিম সরোয়ার হাসানসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলো বলেন, এই পাওয়ার প্লান্ট হওয়ার পর আমরা দক্ষিনাঞ্চলেও আরও একটি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করবো। এজন্য জমি খোজা খুজি ও সার্ভে কাজ চলছে। আরও একটি পাওয়ার প্লান্ট করতে পারলে দেশের ঘরে ঘরে ও শিল্পকল কারখানায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর পরও সাশ্রয় হবে। আমরা চাই বাংলাদেশকে একটি সুন্দর ও উন্নত সমৃদ্ধশালী আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে। বাংলাদেশে শতবর্ষ উদযাপন করবে। এজন্য সঠিকভাবে কাজ করতে হবে যাতে দেশকে পিছিয়ে পড়তে না হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ যে উন্নতি ও অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এই গতি ঠিক রাখতে চাই।
তিনি বলেন,২০২৪ সালে এই প্রকল্পে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে। এতে দেশের মানুষের ব্যাপকভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। তিনি বলেন,আমাদের লক্ষ্য হলো, ভিশন ২০২১ এ জাতির পিতার জন্ম শত বার্ষিকী পালন করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীও পালন করব। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ৪১ সালে বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে চাই বাংলাদেশকে।
এর আগে মন্ত্রনালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে রি-এ্যাক্টর পেসার ভেসেল স্থাপনের অনুমতি প্রদান করায় প্রকল্পের পিডি ড.শৌকত আকবর প্রধানমন্ত্রীকে ধণ্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন এবং রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট -১ এর চুল্লি স্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শণ করা হয়।
১৯৬১ সাল থেকে ২০১৭ সালের ৩০ নবেম্বর। মাঝ খানের সময়টি লম্বা ৫৬ বছরের। দীর্ঘ সময় একবার গ্রহন একবার বাতিল এর মধ্যে আটকে ছিল রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রর ভাগ্য। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭৩ এ একবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হবার পর সেই স্বপ্ন হারিয়ে গিয়েছিল। ২০০৯ এ সরকার গঠনের পর আবার সেই স্বপ্ন জাগিয়ে তুললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ২০১১ সালে চুক্তি করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সই হল ঋণ চুক্তি । গত ২০১৭ সালের ৩০ নবেম্বর প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা পরমাণু চুল্লির সিমেন্টিং কাজের উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজের। দেশের ইতিহাসে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। বাংলাদেশ প্রবেশ করে পরমাণু বিদ্যুত উৎপাদনের যুগে। পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩২তম দেশ হিসেবে নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনে আসবে আগামি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। আর দ্বিতীয় ইউনিট আসবে পরের বছর । এর আগে রুপপুরে আবাসন ছাড়াও অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থায়নে,নির্মাণ এবং পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাশিয়া থাকবে বাংলাদেশের পাশেই। শুরুর দিকে পরমাণু বর্জ্য ফেরত নেওয়া নিয়ে সংসয় থাকলেও পরবর্তীতে আরও একটি চুক্তি করা হয়। এই চুক্তিতে রাশিয়ায় বর্জ্য ফেরত এবং পরিশোধন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এজন্য তাদের আলাদাভাবে অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
Leave a Reply