ঈশ্বরদী প্রতিনিধি ॥ ঈশ্বরদীর লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৫৬ টি ইটের ভাটার মধ্যে ৫০টি ভাটায় ইট উৎপাদন করা হচ্ছে।
এসব ইট ভাটাগুলির মধ্যে অন্তত:৩০/৩৫ টি ইট ভাটা ভূমি হীনদের নামে বরাদ্দকৃত সরকারী খাস জমিতে গড়ে উঠেছে। এই ইট ভাটাগুলিতে যে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তাও সরকারী পদ্মা নদীর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রায় প্রত্যেকটি ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। সরকার নির্ধারিত সাইজের থেকে ছোট করে সকল ভাটাতেই ইট তৈরী করা হচ্ছে। ঈশ্বরদী কাষ্টম, এক্সসাইজ এ্যান্ড ভ্যাট সার্কেল ঈশ্বরদী অফিসে খাতা কলমে সব ইটভাটার হিসাব নেই। ইট তৈরী ও বিক্রি ঠিকই হচ্ছে কিন্তু রাজস্ব সরকারী অফিসে জমা হচ্ছেনা। এতে চলতি মৌসুমে শুধু ইটভা থেকে সরকার অন্তত:১০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের দেওয়া অভিযোগে এসব তথ্য জানাগেছে।
সূত্রমতে,আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং এলাকাবাসীর বাধা-নিষেধের তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ফসলি জমি, ফলদ ও বনজ বাগান, বাসাবাড়ি সংলগ্ন এবং চলাচলের রাস্তাসহ ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধ ইট ভাটাতে প্রকাশ্যেই ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে জমির উৎপাদন যেমন কমছে, তেমনি এলাকার বনজ সম্পদ উজাড় হয়ে পরিবেশে তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। অপরদিকে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়ায় করোনাকালে সর্দি কাশিসহ শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিও বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা স্বাস্থ্যা ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইট ও কাঠ বহণে রাস্তা ব্যবহার করায় কোটি কোটি টাকা দিয়ে তৈরী রাস্তাগুলিও নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সকলেরই কমবেশী জানা আছে। এলজিইডি থেকে রাস্তা রক্ষায় বিভিন্ন রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তৈরী করা লোহার বারগুলোও ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে,ঈশ্বরদী কাষ্টম,এক্সসাইজ এ্যান্ড ভ্যাট সার্কেল ঈশ্বরদী অফিসে খাতা কলমে সব ইভাটার হিসাব নেই। কারণ সব ভাটার হিসাব রাখলে ব্যক্তিগত আয় হয়না। হিসাবের বাইরের ভাটা থেকে অবৈধভাবে চুক্তি মোতাবেক অর্থ নেওয়া হয়। এতে সরকার পড়ছে রাজস্ব ফাঁকির গেড়াকলে । ভাটা মালিকদের সাথে অত্র অফিসের গোপন চুক্তি রয়েছে। মৌসুম শুরুতেই অনিয়মের সাথে জড়িত ভাটা মালিকরা প্রায় ১৯ লাখ টাকা চাঁদা তুলে কাষ্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তাসহ কতিপয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে বন্টন করেছে। এজন্য সরকারী জমির মাটি ব্যবহার করে কাঠ পুড়িয়ে নির্ধারিত সাইজ কমিয়ে তৈরী করা ইট প্রকাশ্যে কাষ্টম অফিসের সামনে দিয়ে নিয়ে গিয়ে ঈশ্বরদী শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হলেও কাষ্টম কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা নেননি। এমনকি অন্য কারও তেমন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয়না।
লক্ষিকুন্ডার বিভিন্ন এলাকায় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই বেশীরভাগ ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। অবৈধ ইট ভাটার কারণে ফসলি কৃষি জমির উপরি অংশ, সরকারী খাল ও নদীর মাটি অবৈধভাবে খনন করে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করছে। একইভাবে আম, জাম, কাঁঠাল রেন্ট্রি, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সব অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাটার নেই কোন বৈধ কাগজ পত্র। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকলেও অসাধু মালিকরা প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পোড়লেও রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ নীরব।
সরকার এ অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও এলাকার প্রভাবশালী মহল সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ম্যানেজ করে বসতবাড়ি ও হাট-বাজার, রাস্তার পাশে অবৈধ ইট ভাটা তৈরি করে ইট তৈরী করে যাচ্ছে দেদারছে।
লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নের একাধিক ভুক্তভোগীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাতেগোনা কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতি বছর পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আতাত করে সরকারী নদীর জমিতে ভাটা দিয়ে নদীর মাটি কেটে এবং কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরী করে বাজারজাত করে যাচ্ছে। কাষ্টম অফিসের সাথেও তাদের চুক্তি রয়েছে তাই ভাটা মালিকরা বেপরোয়াভাবে এই ব্যবসা চালিয়ে গেলেও কারও কোন অসুবিধা হয়না। বাড়ির সামনে ফসলি জমিতে অবৈধ ভাটার আগুনের কালো ধোঁয়ার কারণে ফলদ ও বনজ বাগানের গাছের পাতা কালো হয়ে ঝড়ে পরে এবং ফল নষ্ট হয়ে যায়। চলতি বছরেও ইট তৈরি করতে দেখে আতঙ্কের মধ্যে আছি। কোথায় গেলে এ ইট পোড়ানো বন্ধ করতে পারব বুঝতেছি না। তিনি বলেন শুনেছি এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোন লাভ নাই। । ভাটাতে কাঠ দিয়ে আগুন দেয়ার সময় কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্যা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়াসহ সড়কে যান চলাচলের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদিকে ঐসব অবৈধ ভাটা মালিক পক্ষ সকল প্রকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন তারা বৈধভাবে ইট তৈরী ও বিক্রি করছে। কোন প্রকার অবৈধ কাজ করছেন না। ইতি মধ্যে অবৈধ ভাটায় কাঠ পোড়ানোর দায়ে তিনটি ভাটা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবীর বলেন,প্রায় এক’শ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরী করা রাস্তা গুলিকে রাক্ষার জন্য লক্ষিকুন্ডা ও সাহাপুর ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ পয়েন্টে প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচটি লোহার বার তৈরী করা হয়েছিল। অবৈধ যানবাহন চালানোর জন্য রাতের অন্ধকারে সে বার গুলি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূ’মি) পিএম.ইমরুল কায়েস জানান, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এসব বিষয়ে কোন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কয়েকজন সাংবাদিক অফিসে গিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের দিয়ে অবৈধ ইট ভাঁটার মালিক, বিড়ি ফ্যাক্টরীর মালিক, বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ভ্যাট কমিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় কোটি কোটি টাকা সরকারী রাজস্বের ক্ষতি করছেন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অফিসে বসে টেলিভিশন দেখতে ব্যস্ত ঈশ্বরদী কাস্টম এক্সসাইজ এ্যান্ড ভ্যাট সার্কেল অফিসের রাজস্ব কর্মকর্তা লুৎফর রহমান উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, কার পারমিশন নিয়ে অফিসে এসেছেন । অফিসে একবার ও ইন করবেন না । সাংবাদিকদের সাথে দূর্বব্যবহার করে তিনি কোন প্রকার তথ্য দিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন । এমনকি নিজের নামটিও বলার জন্য হেড কোয়াটারের পারমিশন লাগবে বলে সাংবাদিকদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন।
ভুক্তভোগীরা এই কর্মকর্তার ঈশ্বরদী অফিসের কর্মকালিন সময়ের রাজস্ব আদায়ের ফাঁকিবাজিসহ সমস্ত কাজের সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
Leave a Reply