আশরাফুল আবেদীন ॥ ঈশ্বরদীর গোয়াল বাথানস্থ মেসার্স সুমি ফিড মিলের পনে চার কোটি টাকার ক্ষতি পূরণ চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে মিল মালিক বেলায়েত সরকার শুক্রবার বিকেলে তার মিল চত্বরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাবনা-১ এর দাশুড়িয়া অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ঘুষের ১০ হাজার টাকা দিতে না পারা, লুজ ফিড মিলের বৈদ্যুতিক লাইনের মিটার খুলে তার পরিবর্তনের মাধ্যমে রিডিং পরিবর্তণ করে বেশী বিল দাখিল করা, কয়েন মুদ্রায় বকেয়া বিল গ্রহণ না করা,অনিয়ম করে রিবেটের টাকা ফেরত চাওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে আমার গত প্রায় চার বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ সময় সাংবাদিক সম্মেলনে তার স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। মেসার্স সুমি লুজ ফিড মিলে পুণরায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে শিল্পোন্নয়নে বিশ্বাসী ও মানবতার মাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, লুজ ফিড মিলের বৈদ্যুতিক লাইনের মিটার খুলে তার পরিবর্তনের মাধ্যমে রিডিং পরিবর্তণ করে বেশী বিল দাখিল করা,পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাবনা-১ এর দাশুড়িয়া অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের চাওয়া ঘুষের ১০ হাজার টাকা দিতে না পারা, কয়েন মুদ্রায় বকেয়া বিল গ্রহণ না করা,অনিয়ম করে রিবেটের টাকা ফেরত চাওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে ক্ষতি পূরণ, মেসার্স সুমি লুজ ফিড মিলে পুণরায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান কামনা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন,২০০৫ সালে মাছ,মুরগী ও গরুর খাদ্য প্রস্তুতের জন্য মেসার্স সুমি লুজ ফিড মিল স্থাপন করে পল্লী বিদ্যুৎ দাশুড়িয়া অফিসের মাধ্যমে মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন। বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার পর মিলে উৎপাদন চলমান থাকে। এ সময় দাশুড়িয়া অফিসের ডেপুটি ম্যানেজার বেলায়েত সরকারের নিকট প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে উৎকোচ দাবি করে বলেন, আপনি টাকা দিলে মিলের মাসিক বিদ্যুৎ বিল কম করে করা হবে। তার অনৈতিক প্রস্তাবে তিনি রাজি না হওয়ায় ডেপুটি ম্যানেজার ক্ষিপ্ত হন। এরই জের ধরে গত ৬/১২/২০১৬ ইং তারিখে বেলায়েত সরকার ঢাকায় থাকা কালিন সময়ে কোন প্রকার নোটিশ না দিয়ে সিলগালা করা মিলের মিটার খুলে তার পরিবর্তণ ও বিলের রিডিংও পরিবর্তণ করা হয়। পরে হঠাৎ করে মিটারের তার পুড়ে যায়। এ কারণে পূর্বের তুলনায় তিন চার গুণ অতিরিক্ত বিল দাখিল করা শুরু হয়। অবস্থা বুঝে অফিসের কর্মকর্তাদের নিকট বেশী বিল দাখিলের বিষয়টি জানানো হলেও তারা কোন সঠিক উত্তর দেননি এবং তার পুড়ে যাওয়ার কারণ জানানো হয়না। কর্মকর্তাদের কার্যক্রম বুঝতে পেরে মিলমালিক বেলায়েত সরকার গত ২০.১১.২০১৭ ইং তারিখে পাবনা আদালতে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মেশবাহুল হক ও জুলফিকার হায়দার জেনারেল ম্যানেজার পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কে বিবাদী করে অঃপ্রঃ ২০/২০১৭ নং মামলা করি। সাক্ষী প্রমানে মামলায় বেলায়েত সরকারকে না জানিয়ে সিলগালা করা মিটার খোলার প্রমাণ মিলে যায়। পরে চাকরী বাচানোর জন্য মিটার খোলা ও বিল বেশী দেওয়ার অপরাধ স্বীকার করেন ও বেলায়েতকে অনুরোধ করেন যে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার মিলে আবারও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার শর্তে রাজি হয়ে মামলা উঠিয়ে নেওয়া হয় । শর্ত মোতাবেক মিলে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেওয়া হলে আবারও উৎপাদন শুরু করা হয় মিলে। এবার মিলে উৎপাদন শুরু হওয়ার প্রায় দু’মাস পর মামলা উঠিয়ে নেওয়ার সময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাবনা-১ দাশুড়িয়া অফিস কর্তৃপক্ষ বেলায়েত সরকারের কাছে বিদ্যুৎ অফিসের ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩’শ২৮ টাকা পাওনা আছে দাবি করে কোর্ট মাধ্যমে জানানো হয়। কিন্তু মামলা উঠানোর পর গত ১০.১.২০১৮ ইং তারিখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাবনা-১ দাশুড়িয়া অফিসের ডিজিএম মেশবাহুল হক বেলায়েত সরকারের কাছে ৩৩ মাসের রিবেট এর টাকা বাবদ ৩ লাখ ৩১ হাজার ৪’শ১৮ টাকা ফেরত দাবি করে নতুন করেন। এ কারণে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হয় ।
মিল চলমান থাকা অবস্থায় ট্রান্স ফরমার বর্জপাতে পুড়ে যাওয়ার পর ট্রান্স ফরমারটি খুলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাবনা-১ চাটমোহর অফিসে নেওয়া হয়। এতে মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বেলায়েত সরকার ঐ অফিসে যোগাযোগ করলে অফিস থেকে ৩৯ হাজার টাকা দাবি করা হয়। এ কারণে তিনি অফিস কর্তৃপক্ষকে ৩৯ হাজার টাকা কিস্তি করে দেওয়ার অনুরোধ জানালে অফিস থেকে কিস্তি করে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একই সাথে কর্তৃপক্ষ আবারও রিবেট বাবদ ৩ লাখ ৩১ হাজার ৪’শ১৮ টাকা দাবি করেন। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার পরও তিনি উক্ত টাকা কয়েন মুদ্রার মাধ্যমে পরিশোধের জন্য গত ১৫.০৭.২০১৮ ইং ও ০২.১২.২০১৮ ইং তারিখে দু’টি লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। কর্তৃপক্ষ লিগ্যাল নোটিশ দু’টির জবাবের মাধ্যমে তাদের দাবিকৃত বিল সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কিছুই বেলায়েতকে জানাননি। এরপরও বেলায়েত সরকার বকেয়া মুল বিলের মোট টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা কয়েন মুদ্রা বাদে কাগজের টাকায় পরিশোধ করার জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঁচবার লিখিত আবেদন করেন। একই সাথে তিনি ২ লাখ টাকা নেওয়ার পর অবশিষ্ট বকেয়া টাকার কিস্তি করে দেওয়ার অনুরোধসহকারে মিলে পুণরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আবেদন করেন কর্তপক্ষ বরাবর। এতেও কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিনি আবারও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করার জন্য লিখিত আবেদন করেন। এরপরও কোন ফল পাননি বেলায়েত সরকার। যে কারণে বিগত প্রায় চার বছর থেকে মিলে উৎপাদন বন্ধ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বেলায়েত সরকার নানা ভাবে চার বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার পরিমাণ ক্ষতির শিকার হয়েছেন ।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সর্বশেষ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাবনা-১ দাশুড়িয়া অফিসের বর্তমান ডিজিএম মেশবাহুল হক,এজিএম(ওএন্ডএম)এস,এম,আব্দুল খালেকসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কাছে আবেদন করেও কোন সুরাহা না পেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন বেলায়েত সরকার। এঅবস্থায় আসল অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিদ্যুৎমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বেলায়েত সরকার।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাবনা-১ দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের বর্তমান ডিজিএম মেশবাহুল হক ও এজিএম(ওএন্ডএম)এস,এম,আব্দুল খালেকের কাছে সাংবাদিক সম্মেলনে দেওয়া বেলায়েত সরকারের সকল অভিযোগের বিষয় জানতে চাওয়া হলে তারা বেলায়েত সরকারের সকল অভিযোগ সঠিক না বলে দাবি করেন। একই সাথে পাল্টা অভিযোগ করে তারা বলেন,কোর্টের সিদ্ধান্তের পরও বেলায়েত সরকার কিস্তির টাকা দিতে ব্যর্থ হন । শুধু তাই না, বেলায়েত সরকার মাছের খাদ্য তৈরীর কথা বলে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে মশার কয়েল তৈরীর গুড়া তৈরী করে বাজারজাত করছিল বিধায় তার কাছে রিবেটের টাকা ফেরত দাবি করা হয়েছে।
Leave a Reply